“যারা আমাদের সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর এবং জনসাধারণের শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের অবশ্যই সেসব বিদেশিদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে,” ২০২০ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রের সকল ডিপার্টমেন্ট গুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পাঠানো একটি সতর্ক বার্তায় এ কথা জানান জেরা দারমানা।
শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্তদের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই ঘোষণা উদ্বেগের কারণ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ৬ মে ফরাসি দৈনিক লো ফিগারো কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষা সম্পর্কিত ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা) কে জানিয়েছি, যারা ফরাসি প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সাথে বিরোধী তাদের আশ্রয় সুরক্ষা যেন অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা হয়,”।
অফপ্রার পরিচালক জুলিয়ে বুশের জানান, প্রকৃতপক্ষে গত তিন মাসে ১৪৭ জন ব্যক্তির শরণার্থী মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে যেটি ২০১৯ সালে ছিল মাত্র ৭৭ জন। ২০২০ সালেও প্রায় শতাধিক ব্যক্তির শরণার্থী মর্যাদা একই কারণে প্রত্যাহার করা হয়।
“জুলাই ২০২০ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন কর্মপন্থা বাস্তবায়নের উদাহরণ হচ্ছে উক্ত পরিসংখ্যান। এটি দ্বারা মূলত শরণার্থীদের দায়িত্ব এবং তাদের কি কি কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত তা বুঝানো হয়েছে,” লো ফিগারোকে ব্যাখ্যা করেন জেরা ন জেরা দারমানা।
একটি নির্দিষ্ট আইনি কাঠামো
কোন ব্যক্তির আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রত্যাহার করা মানে এই নয় যে সে ব্যক্তি আর শরণার্থী নেই। কারণ আইনি ভাবে তার মর্যাদা বাতিল হলেও আদতে সে একজন শরণার্থী কারণ তার নিজ দেশে ফিরে যাওয়া তার জন্য নিরাপদ নয়। তাহলে কি শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহার করার পরে নতুন করে একজন বিদেশীকে নির্বাসনে পাঠানো হবে? এর উত্তর এত সহজ নয়।
অভিবাসীদের অধিকার বিশেষজ্ঞ লওরো দেলবস বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহারের বিপরীতে একজন ব্যক্তিকে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার যোগসূত্রটি স্বয়ংক্রিয় নয়৷ কারণ কোন ব্যক্তিকে তার নিজ দেশে ডিপোর্ট (বা অপসারণের ব্যবস্থা) সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট বিধি বিধান দ্বারা পরিচালনা করা হয়৷”
যদি কোন শরণার্থীর উপস্থিতি শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া দেশের সুরক্ষার জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে জেনেভা কনভেনশন বহিষ্কারের অনুমোদন দেয় । তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোর্ট অব জাস্টিস এর সদস্য দেশগুলিকে কেবল একটি শর্তে কোন শরণার্থীকে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়৷ সেটি হলো: “কোন শরণার্থীকে যে দেশে ফেরত পাঠানো হবে সেখানে যদি তার জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি এবং অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা না থাকে সেক্ষেত্রে তাকে ফেরত পাঠানো যাবে”।
অভিবাসী আইন বিশেষজ্ঞ লওরো দেলবস মনে করেন যে জেরা দারমানার ঘোষণা প্রকৃতপক্ষে খুব সীমাবদ্ধ। যদি কোন ব্যক্তিকে আইন অনুযায়ী তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো না যায় তাহলে তার শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহার প্রকৃতপক্ষে কোন অর্থবহন করেনা। নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে এটি আরো বিপদজনক।
অফপ্রার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নের মুখে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরো একটি বক্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘মন্ত্রণালয় অফপ্রাকে শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারবে, কারণ প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অফপ্রা সম্পূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভরশীল।’’ কিন্তু আবার বলা হয়েছে আশ্রয়ের আবেদনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অফপ্রা সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে এবং এটিই হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত।
তবে এটি সত্ত্বেও আশ্রয় অধিকার আইনের আর ৫১১-২ এবং আর ৫১২-২ ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট এবং প্রেফেকচুরকে তার অনুরোধ করার সুযোগ রয়েছে। “এছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকিস্বরুপ, সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়াসহ কিছু বিশেষ অপরাধের প্রেক্ষিতে প্রেফেকচুর এবং ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অফপ্রা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেটি অনুসরণ করা হয়েছে সম্প্রতি বহিষ্কার হওয়া ১৪৭ জনের ক্ষেত্রে”, ব্যাখ্যা করেন অফপ্রা পরিচালক জুলিয়ে বুশের।
অফপ্রার এই দ্বৈতনীতি নিয়ে সচেতন মহলে প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নে উঠেছে। অফপ্রার একটি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের শেষ দিকে অফপ্রা নিজ উদ্যোগেই শরণার্থী মর্যাদা শেষ হওয়া অথবা প্রত্যাহার করা ফাইলগুলোর জন্য একটি বিশেষ শাখা খোলার উদ্যো নেয়।
সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস